গ্রাম পঞ্চায়েত

গ্রাম পঞ্চায়েত ও এর বিচার ধারার ঘটনা প্রবাহ

by shakil

গ্রাম পঞ্চায়েত ও এর বিচার ধারা একটি বাস্তব ঘটনার সাথে মিল রেখে আমি এখানে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছি। যেখানে মানুষের মনে থাকা গ্রাম পঞ্চায়েত সম্পর্কে কিছু প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষেরই শিখর গ্রামে। তাই আমাদের মধ্যে গ্রাম সম্পর্কে অনেক মহৎ ধারনা রয়েছে। তবে এদের মধ্যে এমনও অনেকে আছে যারা গ্রাম সম্পর্কে কিছুই জানে না এমনকি জানতেও চায় না। তবে সবাই গ্রামকে একটু বেশি ভালবাসে এবং মনের মধ্যে গ্রামের কিছু বিশেষ ধারণা রাখেন। আমরা রাষ্ট্রীয় বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে বেশ ভালই জানি। তবে আমরা কী এটা কখনও ভেবে দেখেছি যে, রাষ্ট্রীয় বিচার ব্যবস্থার পূর্বে আরও একটি বিচার ব্যবস্থা রয়েছে?

হয়তো অনেকেই জানেন আবার অনেকেরই এর সম্পর্কে কোনো ধারনা নেই। রাষ্ট্রীয় বিচারের পূর্বে যা হয় তা হলো গ্রাম্য সালিশ বা গ্রাম পঞ্চায়েত বিচার ব্যবস্থা। যাদের এর সম্পর্কে কিছুটা ধারনা আছে তারা অবশ্যই তাদের মতামত জানাবেন এবং যাদের কোনো ধারণা নেই তারা এই লেখাটি মনোযোগ দিয়ে পড়েন। আশা করি নিরাশ হবেন না। গ্রাম পঞ্চায়েত বিচারের কোনো উল্লেখিত ধাপ থাকে না। তবে কিছু নিয়ম উল্লেখযুগ্য। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো দুই পক্ষকে মিলিয়ে দেওয়া, রায় অসম্পুর্নভাবে রেখে যাওয়া, ছোটদের কোনো কথা না শুনা ইত্যাদি।

গ্রাম পঞ্চায়েত

মনে করুন, হারুন আর রহিম দুই ভাই। হারুন রহিমের চেয়ে বয়সে বড়। এখন কোনো একটি বিষয় নিয়ে হারুন এবং রহিমের মধ্যে মনোমালিন্য তৈরি হলো। এখন কিছু মানুষ আছে যারা হারুনকে উসকে দেয় এবং এরাই আবার রহিমকে উসকে দেয়। তারপর হারুন এবং রহিমের মধ্যে মুটামুটি একটা তর্কাতর্কি হয় এবং পরে তারা নিজ নিজ ঘরে চলে যায় এবং সকল ঘটনা তাদের স্ত্রী এবং সন্তানকে জানায়। তারপর হারুন আর রহিম ঘরে বসে থাকে এবং দুই পক্ষের স্ত্রী সন্তানরা মারামারি করে। তারপর এই মারামারি শুনে গ্রাম পঞ্চায়েতের কিছু মানুষ আসে সেটা বন্ধ করার জন্য। মনে করি এই পঞ্চায়তের সদস্য করিম এবং আকবর। প্রথম ১০ মিনিট এরা নিরবতা পালন করে। তারপর এরা ঝগড়াকে আরও বেগবান করে তুলে। এরা দুইজন মিলে উক্ত দুই পক্ষকে উসকে দেয়। তারপর তারা বিচারের কথা বলে। তারপর হারুন আর রহিমকে তাদের নিজ নিজ ঘর থেকে বের করে গ্রাম পঞ্চায়েত বিচার মেনে নেওয়ার জন্য রাজি করা হয়।

গ্রাম পঞ্চায়েত

এখন করিম এবং আকবর দুই পক্ষের কাছ থেকে আমানত হিসাবে ৫ হাজার টাকা করে মোট ১০ হাজার টাকা নিয়ে পঞ্চায়েতে জমা করে। পরে কোনো এক সন্ধ্যায় বিচারের সময় নির্ধারন করা হয়। এখন অনেকেই আমাকে এই বিষয় নিয়ে অনেক প্রশ্ন করতে পারেন। তবে আমি সত্য একটি ঘটনা উল্লেখ করেছি। বাস্তবে গ্রামের অধিকাংশ ঝগড়া হয় ভাই ভাইয়ের মধ্যে তাও খুব ছোট একটি বিষয় নিয়ে। আর পঞ্চায়েত সদস্যরাও এমনটাই করেন। এখন আমরা চলে যাই পঞ্চায়েতের বিচার সভায়। সন্ধ্যাবেলা গ্রামের সকল মুরব্বি এবং পঞ্চায়েত সদস্যরা উপস্থিত হন। তারপর শুরু হয় আলাপ। তবে এটা ঐ ঝগড়া সম্পর্কিত কোনো আলাপ না, এমনিতেই যার যা মাথায় আসে তা নিয়েই। এখন অনেকেই আবার বলতে পারের আমি মিথ্যা বলছি।

তবে আমাকে অবিশ্বাস করার কিছুই নেই, আমি কেবল বাস্তবটা আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। যাই হউক, আসল কথায় আসা যাক। তো তারা কিছুক্ষন কথা বলার পর চা বা পান খান। তারপর শুরু হয় ঐ ঝগড়া নিয়ে কথা। তো কথা শুরু করেন করিম এবং আকবর। উনারা গিয়ে কী দেখেছেন সেটাই একটু রঙ লাগিয়ে বলেন আর সবাই নিরব ভূমিকা পালক করেন। যদি কেউ কিছু বলে ফেলে তাহলে তার মুখ ধমক দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়। করিম এবং আকবরের কথা বলা শেষ হয়ে গেলে বিষয়টা আবার বিশ্লেষন করার জন্য হারুনকে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়। তো হারুন তার অবস্থান থেকে সকল দোষ তার ছোট ভাইয়ের উপর চাপিয়ে কথা শেষ করে।

এখন আপনি কী ভাবছেন? রহিমের কথা শুনা হবে তারপর বিষয়টা ভাল করে চিন্তাভাবনা করে সবার মতামত নিয়ে বিচারের রায় প্রদান করা হবে? একদম না। আপনার ভাবনাকে এরা সম্পুর্ন বিপরীত করে তুলবে। হারুনের মতামতের পরে পঞ্চায়েতের একজন নিজের মন্তব্য রাখবেন। মন্তব্য মানে ঐ ঝগড়ার ঘটনাটা আবার বিশ্লেষন করবেন। এদিকে রহিম কিছু বলতে চাইলেও তাকে বলার সুযোগ দেওয়া হবে না। কারণ সে হারুনের চেয়ে বয়সে বড়। তাকেও ধমক দিয়ে মুখ বন্ধ করে রাখা হবে। তারপর ঐ পঞ্চায়েতের সদস্য এক পর্যায়ে বলবেন কারো কিছু বলার থাকলে সেটা বলার জন্য। কিন্তু যদি কেউ কিছু বলতে চায় তাহলে আবার তাকে বলার সুযোগ দিবে না। অবশেষে বলা হবে ছোট ভাই বড় ভাইয়ের কাছে ক্ষমা চাইতে এবং একে অপরকে জড়িয়ে ধরে মন থেকে সব দূর করে দিতে। শেষ। এই বিচার পরিপূর্ন।

এদিকে রহিমের কোনো কথাই জানা হলো না। কেন? সে বয়সে ছোট, তার কথা বলা অভদ্রতা। আর পরে রইলো দুই পক্ষের ১০ হাজার টাকা। এই টাকা গ্রামের উন্নয়নের জন্য ব্যবহারের কথা বলে ঐ পঞ্চায়েত সদস্যরা গ্রাস করবেন।

এখানে আপনার মতামত কী,

  • বিচারটা কী আসলেই যুক্তিযুক্ত হলো?
  • কেউ কী ন্যায় বিচার পেলো?
    আসলেই কী হারুন আর রহিম মন থেকে সব দূর করে দিতে পারবে?
  • রহিম কী মনে কোনো কষ্ট পায়নি?
  • এখানেই কী সত্যিই সবার মতামতের ভিত্তিতে বিচার করা হয়?
  • আসলেই গ্রামের মানুষ সহজ সরল। নাহলে এদের অজানার জুলুম কেন মুখ বুজে সহ্য করবে। আপনি সহ্য করবেন?

এমন আরও অনেক বিষয় আছে যা অনেকেরই অজানা। অনুপ্রেরনা পেলে আরও লিখার চেষ্টা করবো।

আমরা প্রতিনিয়তই এইরকম সমসাময়ীক বিষয় নিয়ে আমাদের ওয়েবসাইটে আলোচনা করে থাকি। এছাড়াও আমরা বিখ্যাত মানুষের জীবনের অজানা ঘটনাগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করি। আপনি চাইলে আমাদের অন্য ব্লগগুলোও পড়ে আসতে পারেন। এছাড়াও আমরা প্রতিমাসের প্রযুক্তিবিদ্যা একটি নামে বাংলা ম্যাগাজিন তৈরি করি। যা আমরা ফ্রিতে সবাইকে প্রদান করে থাকি। ফ্রিতে ম্যাগাজিনটি পেতে আমাদের প্রযুক্তিবিদ্যা ওয়েবসাইটে ঘুরে আসতে পারেন।

1 comment

জাহেদ September 15, 2022 - 4:20 am

বিচারটা কী আসলেই যুক্তিযুক্ত হলো?
উত্তর ঃ-এখানে তাদের বিচার পুরোপুরি অযুক্তিক
কেউ কী ন্যায় বিচার পেলো?
উত্তর দুজনের মধ্যে কেউই নেয়ায় বিচার পেল না
আসলেই কী হারুন আর রহিম মন থেকে সব দূর করেদিতে পারবে?
উত্তর হারুন ও রহিম এরমধ্যে রহিম প্রতিহিংসার আগুন জ্বলবে হারুনের ছেলেরা মনে করবে আমার বাবা নেয়ায় বিচার পেয়েছে বিচারে জয়ী হয়েছে রহিমের সন্তান এদেরতারা প্রতি হিংসা করবে
রহিম কী মনে কোনো কষ্ট পায়নি?
পঞ্চায়েতের উপর রহিম মনে কষ্ট পেয়েছে
এখানেই কী সত্যিই সবার মতামতের ভিত্তিতে বিচার করা হয়?
উত্তর কাউকে কোন কথা বলতে না দেয়ার কারণে সবার মতামতেই হয়নি
আসলেই গ্রামের মানুষ সহজ সরল। নাহলে এদের অজানার জুলুম কেন মুখ বুজে সহ্য করবে। আপনি সহ্য করবেন?
উত্তর আমিসহ করবো না এবং আমার সন্তানদের কেউ সহ করতে দিব না ওই বিচারকদের বিচার শেখা উচিত কিভাবে বিচার করা হয় আমি যদি শিখাতে না পারি হয়তো তাদের একদিন কেউ আসবে তাদেরকে শিখানোর জন্য

Reply

Leave a Comment