“তুমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তুমাদের স্বাধীনতা দিবো” – নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু
ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং ব্রিটিশ বিরুধী এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। এই ব্লগে আমরা সংক্ষেপে বর্ণনা করার চেষ্টা করবো নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন অধ্যায়। বাস্তবে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু সম্পর্কে অনেক ইতিহাস ইতোমধ্যে লেখা হয়ে গেছে। যার তারিখ এবং স্থানের অধিক উল্লেখের কারণে আমরা অনেকেই আসল ঘটনাটি হয়তো বুঝতে পারিনি। এ কারণেই আমাদের এই নিবেদন। আমরা আমাদের এই ব্লগে তারিখ এবং সময়ের অধিক উল্লেখ না করে সম্পুর্ন ঘটনাটি বিস্তারিত বর্ণনা করছি যাতে সবাই নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান লাভ করতে পারে।
জন্ম ও শিক্ষা
১৮৯৭ সালের ২৩শে জানুয়ারি বাংলা প্রদেশের উড়িষ্যা বিভাগের কটকে নেতাজি সুভাষচন্দ বসু জন্মগ্রহন করেন। ৬ষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত নেতাজি সুভাষচন্দ বসু একটি ইংরেজি স্কুলে পড়ালেখা করেন (বর্তমানে স্টুয়ার্ট স্কুল) । ছোটবেলা থেকেই সুভাষ বেশ মেধাবী ছিলেন। যার ফলে বাংলা সংস্করন এবং বাঙালী ঐতিহ্য ধারন করার জন্য নেতাজি সুভাষচন্দ বসু বেশ আগ্রহী হয়ে উঠেন ছোটবেলা থেকে। ৬ষ্ঠ শ্রেণির পরে সুভাষকে কটকের কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি করা হয়। ১৯১১ সালে মেট্রিকোলেশন পরিক্ষায় কলকাতা থেকে প্রথম সাথে অধিকার করেন সুভাষ। ১৯১৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত স্কটিশচার্জ কলেজ থেকে দর্শনে বিএ পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হন। অবশেষে তিনি সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় ভাল নম্বর পেয়ে তিনি প্রায় নিয়োগপত্র পেয়ে যান। তবে উনার বিপ্লবী মনোভাব এবং স্বদেশ প্রেমের কারণে তিনি উক্ত নিয়োগপত্র প্রতাখ্যান করেন। এই বিষয়ে সুভাষ বলেছিলেন “কোনো সরকারের সমাপ্তি ঘোষণা করার সর্বশ্রেষ্ঠ পন্থা হল তা থেকে (নিজেকে) প্রত্যাহার করে নেওয়া”
সংগ্রামে যাত্রা
তখন ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দ দমনমূলক রাওলাট আইন ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের বিক্ষুব্ধ করে তুলেছিল। তারপর নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ভারতে ফিরে “স্বরাজ” নামক ততকালীন একটি সংবাদপত্রে লেখালেখি শুরু করেন বঙ্গে কংগ্রেসের প্রচাররের দায়িত্বে নিযুক্ত হয়। অনেকটা ধরে নেওয়া যায় তার রাজনৈতিক জীবনের শুরু এখান থেকেই। ১৯২৪ সালে যখন চিত্তরঞ্জন দাশ কলকাতার পৌরসংস্থার মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন তখন সুভাষ তার অধীনে কর্তরত ছিলেন। সুভাষের রাজনৈতিক গুরু চিনে চিত্তরঞ্জন দাস। ১৯২৫ সালে জাতীয়তাবাদের কারণে সুভাষসহ আরও বেশ কয়েকজন জাতীয়তাবাদীদের বন্দি করে মান্দালয়ে নির্বাসিত করা হয়। সেখানে থাকা অবস্থায় সুভাষ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হন। প্রায় বিশ বছরের মধ্যে সুভাষ মোট ১১ বার ইংরেজের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন।
তখন পর্যন্ত সুভাষ জাতীয়তাবাদের জন্য লড়াই করে গেছেন। যদি বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে আমরা দেখি তাহলে এমন কিছু নেতা পাওয়া খানিক কষ্টসাধ্য। এমনি এক জাতীয়তাদী মানুষ ছিলেন ক্ষুদিরাম। আমরা আমাদের অন্য একটি ব্লগে ক্ষুদিরাম সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ননা করে গেছি। আপনি চাইলে এখান থেকে ক্ষুদিরামের জীবনের উল্লেখযুগ্য ঘটনা সম্পর্কে জেনে আসতে পারেন। ১৯৩৮ সালে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ভারতীয় কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৩৯ সালে আবার নেতাজি দ্বিতীয়বারের মতো ত্রিপূরা সেশনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়।
যদিও নেতাজি এই নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন, তারপরও গান্ধীজীর সাথে মতবিরোধ থাকার কারণে দলের অন্যান্য নেতাকর্মী তাকে পদত্যাগের জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়। অন্যথায় তাদের বড় একটা অংশ পদত্যাগ করবে বলে দাবি জানায়। অবশেষে নেতাজি নিজে থেকেই সরাসরি গান্ধীর নিকট পদত্যাগের ঘোষণা করেন। এর পর থেকেই বাধনহীন সুভাষ রাজনৈতিক সকল বাধন থেকে মুক্ত হয়ে ফরওয়ার্ড ব্লক নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু সে সময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যায় এবং ভারতীয় সকল সেনাবাহিনী ব্রিটিশের পক্ষে যুদ্ধে অংশগ্রহন করে। এই ঘটনার পরে নেতাজির ক্ষতের সৃষ্টি হয়। তখন পর্যন্ত নেতাজি গৃহবন্দি ছিলেন এবং মনে মনে দেশ ত্যাগ করার পরিকল্পনা করেন।
খুব সতর্কতার সাথে ব্রিটিশদের চোখ এড়িয়ে নেতাজি আফগানিস্থান ও সোভিয়েত ইউনিয়ন হয়ে জার্মানির পথে পাড়ি দেন। তখনকার জার্মানির নেতা হিটলারের সাথে সাক্ষাত করেন নেতাজি। তবে ভারতের স্বাধীনতায় হিটলার কোনোরূপ সহায়তা না করায় নেতাজি জাপানে চলে যান। যখন জাপানে রাসবিহারী বসু গড়ে তুলেছিলেন ভারতীয় জাতীয় সেনাবাহিনী। ১৯৪৩ সালে নেতাজি সুভাষচন্দ বসুর হাতে তিনি ভারতীয় জাতীয় সেনাবাহিনীর দায়িত্ব তুলে দেন। নারী-পুরুশ মিলিয়ে এই সেনাবাহিনীতে মোট সৈন্য সংখ্যা ছিলো প্রায় ৮৫ হাজার জন। তারপরে এই বাহিনীর নাম পরিবর্তন করে আজাদ হিন্দ ফোর্জ রাখা হয়। নেতাজি আশা করেছিলেন ব্রিটিশদের উপর তার বাহিনীর এরূপ আক্রমন দেশে হয়তো ভারতীয়রা তার বাহিনীতে যোগ দিলে। কিন্তু এই ঘুমন্ত জাতি তখনও নিরব ছিলো। অপরদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান, জার্মানি এবং ইতালির পরাজয়ের পর নেতাজির সেনাবাহিনীও পরাজয় মেনে নিতে বাধ্য হয়।
মৃত্যু
মৃত্যু কথাটা হয়তো এই মানুষটার সাথে যায় না। তবে সব কিছুরই শেষ হয় তাই বলে আমরা একে নেতাজির মৃত্যু হিসাবে ধরে নিতে পারি না। একারণেই আমরা কেবল নেতাজির বিপ্লবী জীবনের সমাপ্তির কথা উল্লেখ করছি। যদিও মনে করা হয় বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু হয়। তবে ভারতীয়দের তখন থেকে এখন পর্যন্ত কেউ বিশ্বাস করাতে পারেনি নেতাজির মৃত্যুর এই ঘটনাটি। তাই আমরা এই বিষয়টা বিস্তারিত উল্লেখ করছি না। কেবল এটাই বলা যায় যে, পরাজয় মেনে নেওয়ার পরই নেতাজির বিপ্লবী জীবনের সমাপ্তি ঘটে।