বাংলাদেশে-3G-আসার-আগের-অবস্থা-কেমন-ছিলো

বাংলাদেশে 3G আসার আগের অবস্থা কেমন ছিলো

by shakil

3G বা তৃতীয় প্রজন্মের নেটওয়ার্ক। যা বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই অনেক আগে চলে এসেছে। তবে বাংলাদেশে প্রথম 3G আসতে অনেক দেরি হয়েছিলো। ২০১২ সালের ১২ই অক্টোবর বাংলাদেশীর টেলিফোনে অপারেটর টেলিটকের হাত ধরে প্রথম 3G বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এখন আমরা বিস্তারিত বর্ণনা করবো বাংলাদেশে 3G আসার আগের অবস্থা কেমন ছিলো। অর্থাৎ ২০১২ সালের ১২ই অক্টোবরের আগে বাংলাদেশের ইন্টারনেট কেমন ছিলো, এবং মানুষ তখন ইন্টারনেটে কী কী ব্যবহার করতো।

৪ জুন ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে প্রথম ইন্টারনেট আসে। এর আগে থেকেই বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই ইন্টারনেট সুবিধা গ্রহণ করছিলো, এবং ব্যবহারকারীর সুবিধার কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন ধরনের ডিভাইস এবং সফটওয়্যার তৈরি করা হচ্ছিলো। তখন এই জগতে বাংলাদেশীরা একদম নতুন। ইতিহাস ধর ধরে বলতে গেলে কন্টেন্টটি বিরক্তিকর হয়ে যাবে। তাই সব জায়গায় সাল, তারিখ এবং বিস্তারিত ঘটনা উল্লেখ না করার চেষ্টা করছি। তখন সাধারণত কম্পিউটার দিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করাটা অধিক জনপ্রিয় ছিলো। তবে ঐ সময়ও বেশ কিছু মোবাইল ফোন ছিলো যা ইন্টারনেট ব্যবহারের উপযোগী। তবে সেই দিনগুলো আজকের মতো একদমই ছিলো না। তখন ইন্টারনেট মানে ছিলো তথ্য, ব্যবহার এবং কোনো কিছু সহজে খুজে পাওয়ার উৎস। মার্কেটে Yahoo আসার পর ইন্টারনেট ব্যবহারে এক বিশাল বিপ্লব ঘটে। Yahoo এসে সাধারণ মানুষের কাছে ইলেকট্রনিক মেইল বা ই-মেইল জনপ্রিয় করে তুলে। তখন অবশ্য Facebook, YouTube, Twitter, Instagram, WhatsApp, Messenger ছিলো না। যদি থাকতো তাহলে Yahoo এত জনপ্রিয় হতে পারতো না বলে আমার মনে হয়।


বাংলাদেশ ইন্টারনেট জগতে প্রবেশঃ

একবার চিন্তা করুন তো বাংলাদেশে 3G আসার আগের সময় ইন্টারনেটের অবস্থা কেমন ছিল? তখন পর্যন্ত বাংলাদেশী মানুষরা ইন্টারনেট ব্যবহার করতো ব্যবসার কাজে, লেখাপড়া তথা চাকুরীর আবেদন, বিদেশি কিছু সুবিধা গ্রহণ ইত্যাদি। তারপর একটা সময় Google ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠে এবং পাশাপাশি মার্কেটে চলে আসে Facebook এবং YouTube. তবে ধীর গতির ইন্টারনেট, এবং উপযুক্ত কন্টেন্টের অভাবে YouTube বাংলাদেশ তখন এতটাও জনপ্রিয়তা পায়নি যতটা Facebook এবং Google পেয়েছিলো। বন্ধুদের সাথে যুক্ত থাকার আলাদা একটা ট্রেন্ডই তখন তৈরি হয় Facebook.

অপরদিকে কোনো তথ্য জানতে চাইলে সবাই Google জিজ্ঞাসা করার অভ্যাস তৈরি করতে ব্যস্ত। এরই মধ্যে পরিচিতি পায় Skype. তখন ইন্টারনেটে কল বা ভিডিও কল বলতে সবাই এক কথায় Skype কে এ বুঝতো। Skype তখনকার কম্পিউটার তথা সাধারণ মোবাইল ফোনেও সহজেই ব্যবহার করা যেতো। এই সব কিছুর পরও একটা বিশাল সমস্যা ছিলো ইন্টারনেটের স্পিড নিয়ে। বাংলাদেশের মতো একটা দেশ, যেখানে গ্রামে সাধারণ কল করার জন্যও আলাদা নিজস্ব নেটওয়ার্ক বা এন্টেনা ব্যবহার করা হতো। সেখানে ইন্টারনেট ব্যবহার করটা কেমন ছিলো একবার ভেবে দেখুন।


বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবস্থাঃ

বাংলাদেশে 3G আসার আগের অবস্থাকে পরিপূর্ন ইন্টারনেটের ব্যবহার সঠিকভাবে হিসেবে আসতো না। বাস্তবে কতজন মানুষ সঠিকভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে তা বলা মুশকিল। ২০০৮ সালের দিকে মুটামুটি শহর কেন্দ্রিক মানুষরা ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারতো। যদিও এই ইন্টারনেট স্পিড এখন পেলে আপনি জীবনেও ইন্টারনেট ব্যবহার করার ইচ্ছা রাখবেন না। তবুও ঐ সময় মানুষের কাছে এই স্পিডও বেশ জনপ্রিয় ছিলো। সাধারণত প্রতি সেকেন্ডে ইন্টারনেট স্পিড থাকতো প্রায় 2-13 kbps যা এখন শুনতেই অন্যরকম লাগলেও তখন এই স্পিড যথেষ্ট ছিলো একটা সাইট ব্রাউজ করার জন্য। যদি পুরো একটা নিউজপেপার সাইট লোড হতে কয়েক মিনিট সময় লাগতো। তাও ব্যবহারকারীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি হয়ে থাকে।

তখন ধীরে ধীরে YouTube মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠে। যদিও ধীর গতির ইন্টারনেট ছিলো এবং ১ মিনিটের একটি ভিডিও তে প্রায় ৩ মিনিট বাফারিং ছিলো তাও মানুষ YouTube ব্যবহার করতো। বর্তমানে বাফারিং শব্দটা হয়তো অনেকেই জানেই না। তবে YouTube জনপ্রিয় হয়ে উঠার পিছনে বেশ কিছু কারণ ছিলো। প্রথমত YouTube ই ছিলো একমাত্র প্লাটফর্ম যেখানে এক সাথে এতগুলো ভিডিও দেখা যেতো। আবার তখন থেকে বিভিন্ন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর বিভিন্ন ধরনের কন্টেন্ট তৈরি করতো যা তখনকার মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয় ছিলো। আবার অনেক ফোনে তো প্রথম থেকেই YouTube দেওয়া থাকতো যা ব্যবহারীকে আরও আকৃষ্ট করতো।


বাংলাদেশে 3G আসার আগের

বাংলাদেশে 3G আসার আগে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেটঃ

২০১০ সালের দিকে বাজারে বেশ কিছু স্মার্টফোন চলে আসে। Nokia, Blackberry, Motorola, iPhone এর মতো কোম্পানিগুলো স্মার্টফোন তৈরির প্রতিযোগিতায় নামে। ফলে নতুন নতুন ফিচার যুক্ত হচ্ছিলো মোবাইল ফোনে। বেশ তখনও বাংলাদেশের কোনো প্রিপেইড অপারেটরে 3G আসেনি তাই ইন্টারনেট স্পিডও এতটাও ভাল ছিলো না। তবে নেটওয়ার্কের উন্নতির কারণে কিছুটা স্পিড বৃদ্ধি হয়েছিলো ঠিকই। তখনকার সময় মোবাইল ব্রাউজারগুলোর মধ্যে Opera Browser, UC Browser বেশ জনপ্রিয় ছিলো। তবে যখন থেকে Android Operating System মোবাইলে চালু হওয়ার শুরু হয় তখনই খেলা পরিবর্তন হয়ে যায়। উঠে আসে সকল বিশাল ফিচারসযুক্ত সফটওয়্যারগুলো যাদের মধ্যে Facebook, YouTube, Google Chrome এবং বেশ কিছু অনলাইন গেমস।

যদিও বাংলাদেশে ধীর গতির ইন্টারনেটের জন্য ফোনে এই সফটওয়্যার গুলো ঠিকই থাকতো তবে এর ব্যবহার খুবই কম হতো। এর আরও একটা কারণ ছিলো অবশ্য। তখনকার সময়ের ইন্টারনেট পেকেজের মূল্য অনেক বেশি ছিলো। 10 MB ইন্টারনেট পেকেজ ৩ দিনের জন্য কিনতে গেলে প্রায় ১৫-২০ টাকা খরচ করতে হতো। আবার দেখা গেছে কেউ একটি বেশি ইন্টারনেট ক্রয় করে ফেলছে। তবে ধীর গতির ইন্টারনেটের স্পিডের জন্য তা আর শেষই করতে পারেনি। এইরকম বিভিন্ন সমস্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ইন্টারনেট যাত্রা এগিয়ে যাচ্ছিলো। তবে বেশিদিন আর অপেক্ষা করতে হয়নি। ২০১২ সালে বাংলাদেশে 3G ইন্টারনেট চলে আসে। যদিও সাথে সাথে এর বিস্তার ঘটেনি তবে বেশ দ্রুতই শহর ছাড়িয়ে ইন্টারনেট গ্রামেও ছড়িয়ে পরে।

বাংলাদেশে-3G-আসার-আগের-অবস্থা-কেমন-ছিলো

বাংলাদেশে 3G আসার আগের এবং পরের ইন্টারনেটের বিস্তার

বাংলাদেশের আইটিতে একটি বিশাল বিপ্লব ছিলো 3G ইন্টারনেটের আগমন। 3G ইন্টারনেট আসার পর বেশ কিছু নতুন ব্যবসা বিশেষ করে ই-কমার্স জনপ্রিয় হয়ে উঠে। 3G ইন্টারনেট বাংলাদেশে আসার পর সরকার ইন্টারনেটের মূল্য কিছুটা হ্রাস করে যার ফলে ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। অপরদিকে 3G ইন্টারনেট আসার পর ইন্টারনেট স্পিডও বৃদ্ধি হয় এবং যার ফলে মানুষ Social Media এর দিকে বেশি আগ্রহী হয়। এর ফলই আজকের ফেসবুক বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় Social Media. আজ এই মুহুর্তে আপনি যে কন্টেন্টটি পড়ছেন, আমরা যে কন্টেন্টটি লিখেছি এবং আমাদের বেশ কিছু অনলাইন প্রকল্প সবই 3G ইন্টারনেটে বদৌলতে হয়েছে। যদি এখন আমাদের হাতে৷ 3G ইন্টারনেট না আসতো তাহলে এই কাজগুলো করা এতটাও সহজ হতো না।

TechEdu360 মূলত ইতিহাস ও প্রযুক্তি নির্ভর একটি তথ্যবহুল ওয়েবসাইট। যেখানে এতমধ্যে অনেক প্রবন্ধ আগে লেখা রয়েছে। বিশেষ করে বিলুপ্ত সভ্যতা এবং ইতিহাস নিয়ে। তাদের মধ্যেই একটি বিলুপ্ত সভ্যতা হলো হরিলেক সভ্যতা। যার বিশেষ ব্যাখ্যা তেমন কোথাও পাওয়া যায় নাই। আমি চেষ্টা করেছি কিছুটা তথ্য প্রদান করার জন্য। আপনি চাইলে এখানে ক্লিক করে হরিকেল সভ্যতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে আসতে পারেন

Leave a Comment