আব্দুল বাসিত আব্দুস সামাদ তিনি ক্বারী আব্দুল বাসিত নামে পরিচিত। আব্দুল বাসিত আব্দুস সামাদ(১৯২৭-৩০ নভেম্বর ১৯৮৮) ছিলেন একজন বিশ্ব বিখ্যাত মিশরীয় ক্বারী। তিনি ছিলেন তাঁর সময়কালের অন্যতম কারীদের মধ্যে অনন্য। তাঁর কন্ঠ ছিলো মন্মুগ্ধকর। মাত্র ১০ বছর বয়সে তিনি পবিত্র কোরআন শরীফ মুখস্ত করে ফেলেন। তিনি ১৯৭০ এর দশকের প্রথম দিকে তিনটি বিশ্ব কেরাত প্রতিযোগিতায় তিন তিন বারই প্রথম হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন মিশরের ক্বারী পরিষদের প্রথম সভাপতি।
আব্দুল বাসিত আব্দুস সামাদ আরমান্ত, হারমানথিস মিশরে ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। অনেক আগে থেকে মিশর দেশটি বিখ্যাত সব ক্বারীদের দেশ হিসেবে পরিচিত। এই দেশটিতে জন্ম হয়েছিল জগৎ বিখ্যাত ক্বারী আব্দুল বাসিতের। যিনি ছিলেন তার সময় কালের অন্যতম সেরা ক্বারী। এ বিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ক্বারী হিসেবে বললে বেশী বলা হবেনা মনে হয়। বিশ্বের সকল কোরআন প্রেমি গণ অধ্যাপক আব্দুল বাসেত মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ কে এক নামে চেনে। তার সুললিত কন্ঠ কুরআন তিলাওয়াত তিনি সকলের মন জয় করেছেন। তিনি তার ঐশ্বরিক কন্ঠস্বরে কুরআন তিলাওয়াত করে সকলকে আকৃষ্ট করেছেন।
আব্দুল বাসিত আব্দুস সামাদের জীবনী
ক্বারী আব্দুল বাসিত ১৯২৭ সালে মিশরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন তার বংশের প্রথম কারী। তার দাদা ছিলেন ধর্মীয় শিক্ষক। আব্দুল বাসিত ছোটবেলা থেকে কোরআন তিলাওয়াত কে ভালো বাসতেন। তিনি ভালোবাসতেন ক্বারীদের মত কোরআন তিলাওয়াত করতে। এরি ধারাবাহিকতায় তিনি মাত্র দশ বছর বয়সেই কোরআন শরীফ মুুখস্ত করেন । ক্বারী আব্দুল বাসিত কে মাত্র ১৪ বছর বয়সে মহল্লার মসজিদে তারাবি নামাজ পড়ানোর সুযোগ পান।
ক্বারী আব্দুল বাসিতের সুললিত কন্ঠের কোরআন তেলাওয়াত যে কাউকে করত মোহমুগ্ধ ও মোহাচ্ছন্ন। তার সুললিত কন্ঠের কোরআন তেলাওয়াত ও সুরের মূর্ছনায় আনন্দ লাভ করেছেন মসলিম,অমুসলিম সকলেই। অনেক এ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে তার সুললিত কন্ঠের কোরআন তেলাওয়াত শুনে। তিনি অন্যান্য ক্বারীদের মত হতে চেয়েছিলেন। তার সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্বারী ছিলেন ক্বারী মোহাম্মদ রিফাত। তখন ক্বারী মোহাম্মদ রিফাত এর তিলাওয়াত প্রচার করা হত রেডিওতে ঐ সময়ে ক্বারী আব্দুল বাসিতের এলাকায় কোন রেডিও ছিল না। নিজের পছন্দের ক্বারীর তিলাওয়াত শুনতে তিন কিলোমিটার পথ হেটে এক মেয়রের বাড়িতে যেতেন ক্বারী আব্দুল বাসিত। এর থেকে কাছে আর কোথায় রেডিওর ব্যবস্থা ছিলনা। একটা জিনিসের প্রতি কতটা ভালোবাসা আর একাগ্রতা থাকলে একজন মানুষ শুধুমাত্র রেডিও শুনতে তিন কিলোমিটার পথ হেটে পাড়ি দিতে পারে। পরবর্তী সময়ে তিনি হয়ে উঠেন পৃথিবীর বিখ্যাত ক্বারীদের মধ্যে অন্যতম। তিনি মিশরের প্রেসিডেন্টের সাথে একবার রাশিয়া সফরকালে তিনি কোরআন তিলাওয়াত করেন। তার তিলাওয়াত শুনে রাশিয়ার অমসলিম ডেলিগেটররা অর্থ না বুঝলেও শূরের কাপনে, সুরের শক্তির কাছে নিজেদের অশ্রু বিসর্জণ দেয়। কিন্তু এখনো যে দুয়ার সম্পূর্ণ বন্ধ হয়নি সেখানে কম্পন সৃষ্টি করবেই এই সুর।
পিতার সম্পর্কে সন্তানদের বক্তব্য
এক স্মরণ সভা অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ক্বারী আব্দুল বাসিত সাহেব ও দুই সন্তান “শেখ ইয়াসির” এবং “তারেক আব্দুল বাসিত” উপস্থিত ছিলেন। স্মরণ সভার শুরুতেই কুরআন তেলাওয়াত করেন অধ্যাপক ক্বারী আব্দুল বাসিত সাহেবের ছেলে শেখ ইয়াসির। সেখানে অধ্যাপক ক্বারী আব্দুল বাসিত সাহেবের জীবনীর আলোকে তথ্যচিত্র প্রচারিত হয়। প্রসিদ্ধ এই ক্বারীর মনোরম ও সুললিত কণ্ঠস্বর, প্রতিভাধর, তিলাওয়াতের সময় দীর্ঘ শ্বাস ও মনোযোগ সহকারে তিলাওয়াত এবং প্রশান্তির কারণে শ্রোতাদের অন্তরে সর্বক্ষণ জীবিত রয়েছেন।
বিশ্ব বিখ্যাত ক্বারীর এক কেরাত মাহফিলের ঘটনা
তিনি একদিন এক মাহফিলে কোরআন তিলাওয়াতের জন্য দাওয়াত পেয়েছিলেন। সেখানে তাঁর জন্য সময় বরাবদ্দ ছিল মাত্র ১০ মিনিট। তিনি যখন তিলাওয়াত শুধু করলেন তখন মাহফিলের কিছুটা ভিন্নতা দেখা গেলো। তার সুললিত কন্ঠের তিলাওয়াত শুনে সবাই মুগ্ধ হয়ে তাকে অনুরুধ করলো আরো কিছুক্ষন তিলাওয়াত করতে। তার সুললিত কন্ঠে ১০ মিনিটের স্থলে ১:৩০ মিনিট তিলাওয়াত করলেন। এত মনোমুগ্ধকর কন্ঠে তিলাওয়াত শুনে সময়জ্ঞান ভূলে সবাই শুধু শনতেই থাকলো।
শেখ ইয়াসির বর্ণনায় পিতা
শেখ ইয়াসির পিতার সম্পর্কে বলেন বিশ্ব সেরা ক্বারী আব্দুল বাসিত একবার ভারতে সফল করেছিলেন কুরআন তিলাওয়াতের জন্য। তিনি কুরআন মাহফিলে কুরআন তিলাওয়াত শেষ হওয়ার পর হোটেলে যাওয়ার জন্য গাড়িতে বসেছিলেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত হাজার হাজার মানুষ তার গাড়ির চার পাশে থাকার কারনে কার গাড়ি দেখা যাচ্ছিল না। তিনি একই সফরে ভারতের এক ধনী মুসলমানের আমন্ত্রণে গিয়ছিলেন। অধ্যাপক ক্বারী আব্দুল বাসিত সাহেবকে দেখার পর ভারতের জনগণ পায়ের জুতা খুলে তার সম্মুখে উপস্থিত হয়েছিল। এমন ভাবে উপস্থিত হয়েছিল যেন নামাজ পড়ার জন্য সেখানে উপস্থিত হয়েছিল। বিশ্ব বিখ্যাত ক্বারীর তিলাওয়াত শুনে সবাই মুগ্ধ হয়ে গেল এবং তাদের চক্ষুদ্বয় অশ্রুসিক্ত হয়ে গেল। তিনি সেখানে ভক্তদের ভালোবাসা আর ভক্তি দেখে বিশ্ব বিখ্যাত ক্বারী ক্রন্দন করলেন।
শেখ তারিক বর্ণনায় বিশ্ব বিখ্যাত ক্বারী আব্দুল বাসিত
শেখ তারিক পিতার ভ্রমণ সম্পর্কে বলেন। বিশ্বের সেরা ক্বারী আব্দুল বাসিত আরবি দেশসমূহ, আফ্রিকা, ইউরোপ এবং আমেরিকা সহ বিশ্বের অনেক দেশে সফল করেছেন। একবার দক্ষিণ আফ্রিকায় সংখালঘু মুসলমানেরা প্রিয় ওস্তাদকে আমন্ত্রণ জানায়। কিন্তু তখন জাতিবিদ্বেষের কারণে কায়রো ও জোহানমবার্গের মধ্যে কোন কুটনৈতিক প্রতিনিধি উপস্থিত ছিল না। এ জন্য দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হয়। অবশেষে ১৯৬৬ সালে দুই দেশের কর্তৃপক্ষের র্দীঘ দেড় বছরের আলোচনার পর তিনি সেখানে ভিসা পান এবং সেখানে সফল করেন। তিনি জোহানেসবার্গের “কেপ টাউন “ এবং “লেডি স্মিথ” সহ দক্ষিণ আফ্রিকার বিভিন্ন শহরে সফল করেছেন।
বিশ্ব বিখ্যাত ক্বারীর মৃত্যু
ক্বারী আব্দুল বাসিত সারাজীবন তাঁর তেলাওয়াতের মাধ্যমে বিমোহিত করেছেন বিশ্বের মানুষকে। তিনি মনকে প্রশান্ত করেছেন, আবেগের অশ্রু এনেছেন, মহান আল্লাহর বাণী তাঁর সুললিত কন্ঠে মানুষের অন্তর দুর্গে আঘাত করেছে। অবশেষে এই সুললিত কন্ঠের অধিকারী ক্বারী আব্দুল বাসিত ৩০ নভেম্বর ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন। তিনি তার তিন পুত্রকে রেখে গেছেন। বড় পুত্র ইয়াসির, মেজো পুত্র হিশাম,ছোট পুত্র তারিককে রেখে গেছেন।
আল্লাহ তাকে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থান দান করুন এই দোয়াই করি।
উসমান যার নামেই নামকরন হয় উসমানিও সাম্রাজ্যের যাকে অটোম্যান সাম্রাজ্যও বলা হয়। উসমান সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের এই ব্লগটি পড়ুন।
1 comment
দোয়া টা ভুল হয়ে গেলো, আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করুক, আমিন। এভাবে দোয়া করবেন, “জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থান” এটা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্য।