তিতুমীরের বাল্যকাল
তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো ।
যার পূর্ণ নাম হল (সৈয়দ মীর নিসার আলী)
তিতুমীরের এর জন্ম ২৭শে জানুয়ারি ১৭৮২, জন্ম হয় চব্বিশ পরগনার বসিরহাটের চাঁদপুর গ্রামে। (১৪ মাঘ ১১৮২ বঙ্গাব্দ) তারপর তিতুমীর চলে যান ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে।
তিতুমীরের পিতার নাম সৈয়দ মীর হাসান আলি, এবং তার মাতার নাম আবিদা রুকাইয়া খাতুন। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে জানা যায় তার পূর্ব পুরুষরা ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী (রা.) এর বংশধর। তিতুমীর ছিলেন একজন ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী। জমিদার ও ব্রিটিশদের উপর ছিলেন এক অনন্য বিপ্লবী মানুষ।
তিতুমীর হচ্ছে উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম শহীদ বীর যোদ্ধা।
সবকিছুর উর্ধে অত্যাচারিত হিন্দু জমিদার ও বাঁশের কেল্লার জন্য সবচেয়ে বেশি বিখ্যাত হয়ে আছেন।
তিতুমীরের শিক্ষা জীবন
তিতুমীরের শিক্ষা জীবন শুরু হয় তার গ্রামের এক প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। কিন্তুু তিনি স্কুল জিবনে বেশিদিন পড়ালেখা না করে , পরে তিনি তার এলাকার স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় ভর্তি হন। তিনি শৈশব কল থেকেই অনেক বেশি মেধাবী ছিলেন। তারপর তিনি খুব কম ১৮ বছর বয়সে তিনি কোরআন হাফেজের মর্যাদা লাভ করে থাকেন। তাছাড়া তিনি বাংলা ভাষা ছাড়া আরও কয়েকটি ভাষায় পারদর্শী ছিলেন সেগুলো হল : আরবি ও ফার্সি ভাষায় তার ভালো দক্ষতা ছিল অনেক বেশি।
তিতুমীররের পেশাগত জীবন
তিতুমীরের শিক্ষা জীবন স্কুল ও মাদ্রাসায় পড়া লেখা করলে ও কিন্তু সে তার কর্ম জীবন শুরু করে কৃষি কাজ দিয়ে। কর্মজীবনে তিনি প্রথমে একজন কৃষক ছিলেন। তারপর তার একসময় সব জমি জামা চলে যায়। তারপর তিনি আর দেশে না থেকে কলকাতা চলে যান। কলকাতা যাওয়ার পর তিনি পালোয়ান হিসেবে তিনি তার ক্যারিয়ার শুরু করেন।
তিতুমীরের ইসলাম প্রচার
তিতুমীর কলকাতা যাওয়ার পর পালোয়ান হিসেবে যোগ দেওযার পর স্থানীয় একজন জমিদারের পক্ষে কাজ করতে গিয়ে তাকে এক পর্যায়ে কারাগারে যেতে হয়। তারপর তিনি মুক্তির পর ১৮২২ সালে তিনি হজ্জ করতে সৌদি আরবে চলে যান। আরবের যাওয়ার পর তিনি আরব স্বাধীনতার অন্যতম পথপ্রদর্শকের শিষ্যত্ব গ্রহন করেন এবং ওয়াহাবী যোগ দেয়ার অনুপ্রাণিত দেন তাকে।
তারপর তিনি ১৮২৭ সালে সেখান থেকে ফিরে এসে তার গ্রামের কৃষকদের সাথে নিয়ে ধর্ম প্রচার শুরু করে দেন। তারপর তিনি তার আশে পাশের মাজার গুলোতে গিয়ে মোমবাতি জ্বালানো , শিরক কাজ গুলো যে তারা করতেছে এইসব বিষয় বুঝানোর চেষ্টা চালিয়ে গেছেন।
এই সব কাজ গুলো যে শিরক তিনি সেগুলার বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়ে গেছেন। এক পর্যায়ে তিনি মসজিদ ও দাড়ির খাজনার তীব্র বিরোধিতা শুরু করেন তাদের বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তিতুমীর ও তার অনুসারীদের উপর স্থানীয় জমিদারদের অত্যাচার শুরু হয়। তিতুমীর আগে থেকেই পালোয়ান হিসেবে পারদর্শী থাকার কারণে তিনি তার অনুসারীদের লাটিওয়াল প্রশিক্ষণ শুরু করে দেন। তিতুমীর খুব ভাল একজন লাটিওয়াল ছিলেন। তারপর তিনি তাদেরকে ভাল করে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তোলেন ।
বারাসাতের যুদ্ধ ও তিতুমীর
স্থানীয় জমিদারদের সহযোগিতায় ব্রিটিশ সৈন্যরা তিতুমীরের বিরুদ্ধে কঠিন অভিযান পরিচালনা শুরু করে। কিন্তু অত্যন্ত দক্ষতার সাহসিকতার মাধ্যমে তিতুমীর তাদের পরাজিত করে দেন।
তিতুমীর শুধু তাদেরকে একবার পরাজিত করে নি। স্থানীয় জমিদার ও ব্রিটিশ বাহিনী তিতুমীরের হতে অনেক বার পরাজিত হয়ে গেছেন। আর তিতুমীর শুধু তাদের বিরুদ্ধে একা যোদ্ধ করে যায় নাই , তার সঙ্গে হাজার হাজর কৃষক সৈনিক তার পক্ষে যুদ্ধ করেন।
তারপর ধীরে ধীরে তিতুমীরের অনুসারীদের সংখ্যা ১৫ হাজারের উপরে ছড়িয়ে যায়। তখন তার বুদ্ধিতে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে মুজবুত ভাবে রুখে দাঁড়ানোর জন্য বারাসাত শহরের কাছে তিনি নারিকেল বাড়িয়ায় ঐতিহাসিক বাঁশের কেল্লা তৈরি করে নেন। এর কিছুদিন পর এই এলাকা গুলো তিতুমীরের নিয়ন্ত্রনে চলে আসেন চব্বিশ পরগনা , নদীয়া ও ফরিদপুর।
অবশেষে ১৮৩১ সালে ব্রিটিশ সৈনদের নিয়ে এক শক্তিশালী বাহিনী নিয়ে তিতুমীরের বাঁশের কেল্লায় চার দিক দিয়ে তারা ঘিরে ফেলে। তারপর তারা আধুনিক অস্ত্র ও সরঞ্জাম দিয়ে তিতুমীরের বাঁশের কেল্লায় আক্রমণ চালায়। এইসময় তিতুমীর বলে যান লড়ায়ে হার জিত থাকবেই, তাতে আমাদের কোন রকম ভয় পেলে চলবে না। আমরা আমাদের এই যুদ্ধ চালিয়ে যাব। আর দেশের জন্য শহীদ হয়ে মরতে পারা অনেক বেশি মর্যাদার।
তার বলে যাওয়া কথা
তিনি আরও বলে যান এই লড়াইয়ের মাধ্যমে আমারে লড়াই শেষ হয়ে যায় নাই। আমাদের কাছ থেকে তারা আরও বেশি অনুপ্রেরণা পেয়ে এই দেশ কে তারা একদিন উদ্ধার করবে। আর আমাদের এই দেখানো পথের মাধ্যমেই তারা এই দেশকে স্বাধীন করবে।
আর এই বাহিনীর সঙ্গে তিতুমীরের বাহিনী ও তিতুমীর বাঁশ ও লাঠি দিয়ে এই যুদ্ধে তাদের সঙ্গে একসময় পরাজিত হয়ে যায়।
তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে অতঃপর তিতুমীর বীরত্বের সঙ্গে শাহাদাত বরণ করেন।
ব্রিটিশ কমান্ডার তিতুমীর ও তার অনুসারীদের বীরত্ব ও সাহসিকতার কাজ দেখে লড়াইয়ের প্রসংশা করেন। তারপর এই ঘটনার কারণে তিতুমীরের কমান্ডারকে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়। আরো ও কিছু সংখ্যক লোকজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ঘোষনা দেয় ব্রিটিশ বাহিনী।
তিতুমীর ছিলেন ভারতীয় আন্দোলনের এক অন্যতম প্রেরণার উৎস। আত্মত্যাগ ও ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে দিয়েছিলেন এক নতুন শক্তি।
তিতুমীর বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে উপস্তিত না থেকে ও মুক্তযোদ্ধাদের জন্য প্রেরণার উৎস হিসেবে তাদের মনোবল বাড়িয়ে দিয়ে গেছেন।
তিতুমীরের জীবনের সম্মাননা
তিতুমীর স্মরণে বাংলাদেশে অনেক কিছু তার নামে স্থাপন করা হয়েছে।
মুহাম্মদ জিন্নাহ কলেজ কে , সরকারী তিতুমীর কলেজ নামকরন করা হয়। এছাড়া বুয়েটের একটি হলের নামকরণ করা হয় তিতুমীর হল। তারপর বিবিসির শ্রোতা জরিপে সর্বকালের শ্রেষ্ট বাঙালিদের তালিকায় তার স্থান ছিল ১১ তম। নৌবাহিনীর একটি জাহাজের নাম ও তিতুমীরের সম্মানে জাহাজটির নাম বি এন এস তিতুমীর রাখা হয়।
ইতিহাসের পাতায় তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা নামটি স্মরনীয় হয়ে থাকবে।
তিতুমীর যুগের পর যুগ ধরে বেঁচে থাকবেন বাংলার মাটি ও মানুষের হৃদয়ে অনন্ত কালের জন্য।
ইরানীয় সওদাগরের সুন্দরী কন্যা আনারকলি এর জীবনী এবং উল্লেখযোগ্য ঘটনা নিয়ে ইতোমধ্যে আলোচনা করেছি। আপনি চাইলে সেটি পড়ে আসতে পারেন।
1 comment
Thanks for your blog, nice to read. Do not stop.